এসএসসি ও এইচএসসি’র টেস্ট পরীক্ষার খাতার ব্যাপারে নতুন সিদ্ধান্ত

নির্বাচনী পরীক্ষায় অনুুত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে আর্থিক সুবিধা আদায় সংক্রান্ত অনিয়ম ঠেকাতে কাজ শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আর এ ক্ষেত্রে নির্বাচনী পরীক্ষার খাতা পাবলিক পরীক্ষা না হওয়া পর্যন্ত সংরক্ষণ এবং মাঝেমধ্যে তার নমুনা পরীক্ষা করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

সূত্র জানায়, প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচনী পরীক্ষায় সব বিষয়ে পাস করা শিক্ষার্থীরাই মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) এবং সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে। কিন্তু কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদেরও পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিচ্ছে। বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি বিষয়ের জন্য ৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছে। আবার এমন অভিযোগও রয়েছে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে, যারা নির্বাচনী পরীক্ষায় পরিকল্পিতভাবে ছাত্রছাত্রীদেরকে ফেল করিয়ে দিচ্ছে। পরে প্রতিটি বিষয়ের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে অকৃতকার্যদের পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিচ্ছে। শিক্ষা খাতে এ ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করতে দুদক স্বউদ্যোগে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে।

সূত্র জানায়, এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ের নির্বাচনী পরীক্ষায় অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধে নির্বাচনী পরীক্ষার খাতা পাবলিক পরীক্ষা না হওয়া পর্যন্ত সংরক্ষণ এবং মাঝেমধ্যে তার নমুনা পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে গত ২৭ মার্চ দুদক শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে। দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে নির্বাচনী পরীক্ষা নেওয়ার নিয়ম রয়েছে এবং নির্বাচনী পরীক্ষায় সব বিষয় উত্তীর্ণরাই পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে মর্মে বিধান বিদ্যমান। সম্মানিত প্রধান শিক্ষক/অধ্যক্ষগণকে উল্লিখিত উত্তীর্ণদের বিষয়টি প্রত্যয়ন করতে হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে নির্বাচনী পরীক্ষায় এক বা একাধিক বিষয়ে অনুত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদেরকে ওইরূপ প্রত্যয়নপত্র প্রদানপূর্বক চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে, যা বন্ধ হওয়া সমীচীন।’

দুদক সচিবের পাঠানো চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘এমতাবস্থায় নির্বাচনী পরীক্ষায় অনুুত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদেরকে পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনী পরীক্ষার খাতাগুলো পাবলিক পরীক্ষা না হওয়া পর্যন্ত সংরক্ষণ করা এবং মাঝেমধ্যে তার নমুনা পরীক্ষা করার ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এসব অনিয়ম অনেকাংশে কমবে মর্মে দুর্নীতি দমন কমিশন মনে করে।’ চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪-এর ১৭(ট) ধারা মতে, এসব বিষয় সংশ্লিষ্টদের গোচরীভূত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা কমিশনের অন্যতম দায়িত্ব।’

এ ব্যাপারে দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণরাই নিয়ম অনুযায়ী পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে। কিন্তু অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে নির্বাচনী পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণদেরও পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিচ্ছে। এটা বড় ধরনের দুর্নীতি, শিক্ষা খাতে এ ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করা হয়েছে।

Leave a comment